মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য রাখছেন। ২০১৮। ফটো: আলামি |
এই বাংলা লেখাটি ৩০ অক্টোবর ২০২৩ সালে নেত্র নিউজে প্রকাশিত হওয়া আমার লিখিত নিবন্ধের অনুবাদ।
২০২৩ সালের ৩০ মে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) দাখিল করে যেখানে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনুসকে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এফআইআরে বলা হয় নোবেল শান্তি পুরষ্কার জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসসহ তেরজন ব্যক্তি ফৌজদারি দন্ডবিধির (১৮৬০) বিভিন্ন ধারা মোতাবেক “জালিয়াতি”, “প্রতারণা” ও “অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ”; এবং অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন (২০১২) মোতাবেক “অর্থ পাচার” করেছেন। এফআইআরটি একটি ফৌজদারি আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে দুদক বিষয়টি নিয়ে আরোতদন্ত করছে এবং ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি নাগাদ একটি প্রতিবেদন দাখিল করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এফআইআরে যে অপরাধগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেসব মূলত একটি একটি আর্থিক সমঝোতার চুক্তিকে কেন্দ্র করে। গ্রামীণ টেলিকম এবং এর বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হয়েছিল এই সমঝোতা চুক্তি। সমঝোতা চুক্তির পক্ষগুলো হচ্ছে গ্রামীণ টেলিকম এবং গ্রামীণ টেলিকমের ১৬৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি ট্রেড ইউনিয়ন। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ছিলেন ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত। দুই পক্ষের মধ্যে ৪০৯.৬৯ কোটি টাকার (৩৭.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) একটি আর্থিক সমঝোতা বাস্তবায়িত হয়। গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটির ধরন বা প্রকৃতি হলো “অলাভজনক”।মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি গ্রামীণ ব্যাংকেরও প্রতিষ্ঠাতা,গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের সংখ্যা লঘিষ্ঠ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের এবং তারা এই শেয়ার থেকে পাওয়া লভ্যাংশকে তাদের সামাজিক ব্যবসাভিত্তিক যেসব উদ্যোগ রয়েছে তাতে বিনিয়োগ করে থাকে।
এফআইআরে অভিযুক্ত অন্য বারোজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের আরও ছয়জন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তিনজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং ২০১৭ সাল থেকে ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষে আইনি প্রতিনিধিত্ব করা দুইজন আইনজীবী।
প্রেক্ষাপট
এফআইআরে, দুদক মূলত দুইটি দাবি উপস্থাপন করেছে। প্রথম, গ্রামীণ টেলিকম ও প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে হওয়া সমঝোতা চুক্তিটি “ভুয়া/জাল”। এবং দ্বিতীয়, এই “ভুয়া/জাল” চুক্তিটিকে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা “পারষ্পরিক যোগসাজসে” ট্রেড ইউনিয়নের একটি ব্যংক হিসাবে ২৬.২২ কোটি টাকা “অনৈতিক উপায়ে স্থানান্তর” করেছেন এবং সেই অর্থের বিপুল অংশ ট্রেড ইউনিয়নের নেতা এবং তাদের আইনজীবীরা আত্মসাত করেছে। এফআইআরটি যথেষ্ট জটিল এবং, কিছুটা বিভ্রান্তিকর। এতে অবৈধভাবে স্থানান্তরিত/আত্মসাত করা অর্থের পরিমাণ হিসেবে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অংকের কথা উল্লেখ হয়েছে, যথা: ২৬.২২ কোটি টাকা, ২৫.২২ কোটি টাকা এবং ১.৬৩ কোটি টাকা।
এফআইআরের প্রেক্ষাপট নিয়ে এর আগে নেত্র নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথমে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শ্রম আইনের একটি অংশ প্রযোজ্য নয় দাবি করলেও, গ্রামীণ টেলিকম পরবর্তীতে বাংলাদেশের শ্রম আইনের (২০০৬) সেই বিধান মেনে নিয়ে সমঝোতা চুক্তিতে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করে দিতে সম্মত হয় এবং সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে । আইন অনুসারে কোনো কোম্পানির বার্ষিক লভ্যংশের ৫% দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগ দিয়ে দিতে হবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং বাকি অংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত বিভিন্ন কল্যাণ তহবিলে। সেই ৫% লভ্যংশ থেকে পাওয়া অর্থ ভাগ হবার বিধান হলো, এর ৮০% বিতরণ হবে সরাসরি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ও ২০% কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন কল্যাণ তহবিলে।
দুই পক্ষের মতবিরোধের শুরু ২০১৭ সালে, যখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ট্রেড ইউনিয়নটি প্রথমবারের মত “ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে” (WPPF) অর্থ বরাদ্দ ও জমা করার দাবি তোলে। সেসময় গ্রামীণ টেলিকম এই দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানায়, কেননা তাদের যুক্তি অনুসারে গ্রামীণ টেলিকম একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, তাই লভ্যংশ দেয়ার আইনটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।একই সাথে তাদের যুক্তি ছিল যে লভ্যংশ দেয়ার বিষয়টি যদি মেনে নেয়াও হয়, সেক্ষেত্রেও গ্রামীণফোন থেকে যে অর্থ গ্রামীণ টেলিকম পেয়ে থাকে, সেই অর্থ এই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনা।
তবুও কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে পরবর্তীতে কর্মচারীদের দাবি মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বা নিতে বাধ্য হয় গ্রামীণ টেলিকম। বেশ কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভুত একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় গ্রামীণ টেলিকম। ট্রেড ইউনিয়নের দাবি না মানার ফলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হয় এবং আদালতে পাঁচ বৎসরাধিক সময় ধরে সেই মামলাচলছিল। সেই সাথে , অর্থ অনাদায়ি থাকলে গ্রামীণ টেলিকম বন্ধ হয়ে যাবার আইনি ঝুঁকিও ছিল। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি সিদ্ধান্ত নেয় যে কর্মচারীরা শ্রম আইনের যে বিধানের অধীনে অর্থ দাবি করছিলো, সে বিধানের অধীনেই তাদেরকে অর্থ পরিশোধের জন্য সমঝোতা করা হবে। সেই অনুসারে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল, গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষে এর সভাপতির মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সমঝোতা চুক্তিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয় যে গ্রামীণ টেলিকম ৪৩৭ কোটি টাকা (৩৯.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) একটি ব্যাংক হিসাবে (সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট হিসেবে পরিচিত) স্থানান্তর করবে। সেখান থেকে ১৬৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যেককে, তারা যতদিন কাজ করেছেন তার উপর ভিত্তি করে, অর্থ পরিশোধ করা হবে বলে চুক্তিতে নির্ধারিত হয়। অর্থের পরিমাণ হিসাব করার সময় বার্ষিক ৪% হারে সুদ হিসাব করা হয়। সমঝোতা চুক্তিতে ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল যে, চুক্তিতে নির্ধারিত টাকা যে ব্যাংক হিসাবে জমা করা হবে, সেখান থেকে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর করতে হলে গ্রামীণ টেলিকমের মনোনীত একজন ব্যাক্তি এবং ট্রেড ইউনিয়নের মনোনীত দুইজন প্রতিনিধির যেকোন একজনের স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে।
সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি উপলব্ধি করে যে সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে উল্লিখিত অর্থের পরিমাণ সঠিকভাবে হিসাব করা হয়নি এবং এই অর্থের পরিমাণ ৪৩৭ কোটি টাকা থেকে কমে ৪০৯.৬৯ কোটি টাকা হওয়া উচিৎ। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের শ্রমিক আইন অনুসারে প্রতি বছরের প্রথম নয় মাসের লভ্যংশের অর্থের উপর কোন সুদ দিতে হবে না। প্রতিষ্ঠানটি এই ভুল সম্পর্কে ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের জানায় এবং তারা অর্থের পরিমাণ কমিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়। জুন ২০২২ গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের বিবরণী অনুসারে:
“WPPF-এর পাওনার হিসাব করা হয়েছে ২০১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য। আইনে বলা আছে যে WPPF-এর পাওনা অর্থ পরের বছরের প্রথম নয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তাই, সেই বছরের পাওনা অর্থের উপর সুদের হিসাব করার সময় পরের বছরের তিন মাসকে বিবেচনায় নিতে হবে। কিন্তু কর্মচারী-কর্মকর্তা ইউনিয়ন সেভাবে হিসাব করেনি, বরং তারা পাওনা অর্থের উপর পুরো বছরের সুদ হিসাব করেছে। সুতরাং, ইউনিয়নের এই ভুল ঠিক করতে অর্থের পরিমাণ সমন্বয় করা হয়েছে। সেই হিসাবে WPPF-এর পাওনা ৪০৯,৬৯,২২,৭৮৯ টাকা। চুক্তি অনুসারে, সুদের হিসাব করার সময় চক্রবৃদ্ধি হারের হিসাবে হিসাব করা হয়েছে।”
এবং সেই হিসাব অনুসারে, ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ও সদস্যদের পূর্ণ সম্মতিক্রমে এবং কোন ধরণের অভিযোগ ছাড়াই, ৪০৯.৬৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়।
- ৩৬৪.৬২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয় ১৬৪ জনের মধ্যে ১৫৬ জনের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে (৪ জন মারা গিয়েছিলেন, ৪ জন বিদেশে ছিলেন);
- ২৪.৪৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় সরকারের কর হিসেবে (মোট অর্থের ৫%); এবং
- ২৪.৫৮ কোটি টাকা ইউনিয়নের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয় আইনজীবীদের ফি এবং ইউনিয়নের খরচ মেটাবার জন্য (মোট অর্থের ৬%)।
এভাবে মোট ৪০৯.৬৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। পুরো অর্থই বৈধ উপায়ে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। এছাড়া, আরও ১.৬৩ কোটি টাকা সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রেড ইউনিয়নের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। নীচের ছকে অর্থ স্থানান্তরের পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো।
আইনি হয়রানি বন্ধের আহ্বান
অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলাকে আইনি হয়রানি প্রতিপন্ন করে এবং ন্যায় বিচার না পাবার আশংকা জানিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে এর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
এ বছর সেপ্টেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্র বলেন, “ইউনূস প্রায় এক দশক ধরেই হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শনের শিকার হয়ে আসছেন।” এই মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে যখন ইউনূসকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে তখন তাঁর বিরুদ্ধে পরিচালিত নেতিবাচক প্রচারণা, যা কিনা অনেক সময় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে করা হয়ে থাকে, তা তাঁর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করতে পারে।”
হাইকমিশনারের কার্যালয়ের বিবৃতির এক সপ্তাহ আগে, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুনসহ ১৭০ জন বিশ্ব নেতা এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লেখেন ইউনূস এবং অন্যদের বিরুদ্ধে চলা আইনি প্রক্রিয়া “অনতিবিলম্বে স্থগিত” করার আহ্বান জানিয়ে।
সরকার এই চিঠিকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেন যে ইউনূস বিশ্ব নেতাদের কাছে “ভিক্ষা” করে এই চিঠি লিখিয়েছেন। ।তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথাও বলেন যে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের কোন দল যদি এই বিচার প্রক্রিয়া এবং ইউনূসের মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করতে চায় তিনি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবেন।
কোন বিশেষজ্ঞ বা আইনজীবী প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। আমরা চেষ্টা করেছি এই মামলা ও সমঝোতা সম্পর্কিত সব কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে এবং প্রধান ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে। নীচে আমাদের মূল্যায়ণ তুলে ধরা হলো।
“জাল” সমঝোতা
এফআইআরে দুদকের প্রথম দাবিটি হচ্ছে সমঝোতা চুক্তিটিই “জাল” ছিল। এই দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে যে, সমঝোতা চুক্তিটি ২০২২ সালের এপ্রিলের ২৭ তারিখ স্বাক্ষর করা হলেও যে ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করার কথা চুক্তিতে লিপিবদ্ধ ছিল, সেই হিসাবটি খোলা হয় চুক্তি সম্পাদনের ১১ দিন পর, ২০২২ সালের মে মাসের ৮ তারিখে।
দুদক প্রশ্ন করেছে কীভাবে একটা সমঝোতা চুক্তিতে এমন একটি ব্যাংক হিসাবের নম্বর থাকতে পারে যেটি খোলা হয়েছে চুক্তি স্বাক্ষরের পরে। ফলে, দুদক দাবি করেছে যে এই চুক্তিটি “জাল” এবং “অসৎ উদ্দেশ্যে” “পারস্পারিক যোগসাজসে” প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এটি ব্যবহার করে অর্থ “আত্মসাত” করেছেন।
কিন্তু সমঝোতা চুক্তিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে পুরো চুক্তিটি টাইপ করে লেখা হলেও অ্যাকাউন্ট নম্বরের অংশটিতে একটি খালি ঘর রাখা হয় যেন অ্যাকাউন্ট খোলার পরে ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য হাতে লিখে সেখানে যোগ করা যায়। এবং পরবর্তীতে তাই ঘটেছে। সমঝোতা চুক্তিটিতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে ব্যাংকের হিসাব নম্বরটি হাতে লিখে যোগ করা হয়েছে এবং সেই সাথে পরবর্তীতে যোগ করার প্রমাণ হিসেবে তার পাশেই স্বাক্ষর করা হয়েছে । চুক্তির কাগজ পর্যালোচনা করলে সহজেই দুদকের বিষয়টি বুঝতে পারার কথা। সমঝোতা চুক্তির দলিলটি মিথ্যা বা জাল বিবেচনা করার মতো কোনো তথ্য প্রমান দুদক উপস্থাপন করেনি।
সেটেলমেন্ট (সমঝোতা) চুক্তির একটি অংশের ছবি। ব্যাংক হিসাব নম্বর ঢেকে দিয়েছে নেত্র নিউজ। |
প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগ
দুদকের প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, “চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে” ২৬.২২ কোটি টাকা সেটেলমেন্ট ব্যাংক হিসাব থেকে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে কর্মচারীদের টাকা প্রদানের পূর্বে “তাদের পূর্ব সম্মতি ছাড়াই” “অনৈতিকভাবে স্থানান্তরিত” করেছেন। এই দাবিতে মূল অভিযোগ হলো ২৬.২২ কোটি টাকা ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য অর্থ। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ও আইনজীবীরা, ইউনূস ও অন্যান্য পরিচালকদের সহায়তায় তা আত্মসাত করেছেন।
২৬.২২ কোটি টাকার দুইটি অংশ রয়েছে- ২৪.৫৮ কোটি টাকা এবং ১.৬৩ কোটি টাকা। এই দুই অংশের উৎপত্তি কোথায় এবং এই অর্থ কোথায় গিয়েছে তা স্পষ্ট করার মাধ্যমে বোঝা যাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে কিনা।
২৪.৫৮ কোটি টাকা: উভয়পক্ষের মধ্যে চুক্তিতে নির্ধারিত হয় কর্মচারীরা পাবেন ৪০৯.৬৯ কোটি টাকা। এই অর্থের ৬% হলো ২৪.৫৮ কোটি টাকা। দুদকের দাবি হচ্ছে, এই অংশটি মোট অর্থ থেকে কর্মচারীদের “পূর্ব সম্মতি ছাড়াই” সরানো হয়েছিল। কিন্তু কাগজ পত্রে যে তথ্য আছে সেখানে এর প্রমাণ পাওয়া যায় না। চুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিল থেকে জানা যায় যে প্রাপ্ত মোট অর্থের ৬% আইনি ও অন্যান্য খরচের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে বরাদ্দ রাখা ছিল। ২০২২ সালের ২৪ মে, প্রত্যেক কর্মচারী একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করে জমা দেয় যেখানে লেখা ছিল, “অব্যহতিকালে পাওনা … আইনজীবীর আইনি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৬% গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নকে প্রদান করতে আমার কোন আপত্তি নাই।”
শুধু নাম ও অন্যান্য ব্যাক্তিগত তথ্য বাদে কর্মচারীদের স্বাক্ষরিত চিঠিগুলো একটি গৎবাঁধা ভাষাতেই লেখা হয়েছিল। এর একটির নমুনা দেয়া হলো এখানে।
“এই মর্মে অঙ্গীকারনামা প্রদান করছি যে, আপনার বরাবরে ২৪/০৫/২০২২ ইং তারিখে চাকুরী থেকে অব্যহতি গ্রহণের জন্য দরখাস্ত উপস্থাপন করছি। উক্ত অব্যহতি পত্র অনুযায়ী ৩১/০৫/২০২২ ইং তারিখ গ্রামীণ টেলিকমে আমার শেষ কর্মদিবস। অব্যহতিকালে পাওয়া বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী WPPF এবং কল্যাণ তহবিলের টাকা থেকে ৫% উৎসে আয়কর কর্তন ও আইনজীবীর আইনি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৬% গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নকে প্রদান করতে আমার কোন আপত্তি নাই। উক্ত অর্থ কর্তনপূর্বক অবশিষ্ট অর্থ বুঝিয়া পাইলাম যার চেক নং […] তারিখ ২৪/০৫/২০২২ এবং টাকার পরিমাণ ৪,১০,৮১,৯১৭/- (কথায়: Four Crore Ten Lakh Eighty One Thousand Nine Hundred Seventeen Taka Only)।”
চিঠিতে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে এই অর্থ ট্রেড ইউনিয়নকে দেয়া হয়েছে “আইনজীবীর আইনি ও অন্যান্য খরচ বাবদ”। এখানে এমন একটি চিঠির ছবি দেয়া হলো। নেত্র নিউজ এমন অনেকগুলো চিঠি পর্যালোচনা করে দেখেছে।
এই চিঠিগুলো স্বাক্ষর করা হয় এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই। গ্রামীণ টেলিকমের প্রাক্তন এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অর্থ প্রদান করা হয় ২০২২ সালের ২৫ মে থেকে ১২ জুনের মধ্যে। (দুদকের এফআইআর অনুসারে)
দুদককে এই চিঠিগুলো সরবরাহ করা হয়েছে, তাই কেন তারা এখনো দাবি করছে যে শ্রমিকদের এই অর্থ, ২৪.৫৮ কোটি টাকা, আত্মসাত করা হয়েছে তা বোঝা দুষ্কর। এছাড়াও, কোন কর্মচারী এই বিষয়ে কোন অভিযোগ করেছে এমন দাবিও কোথাও করা হয়নি।
দুদক আরও দাবি করেছে যে সমঝোতা চুক্তিতে বলা হয়েছে যে আইনজীবীদের ফি কর্মচারীরা অর্থ বুঝে পাওয়ার “পরে” পাবে। অবশ্য, সমঝোতা চুক্তিতে ট্রেড ইউনিয়নের আইনজীবী সংক্রান্ত ফি কিংবা এই ফি কখন পরিশোধ করা হবে বা হবে না তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
এটা ঠিক যে ২৪.৫৮ কোটি টাকা থেকে১০ কোটি টাকা কর্মচারীরা চিঠিতে স্বাক্ষর করার আগেই স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু তা কর্মচারীদের অসম্মতিতে হয়নি। তারা ১০ কোটি টাকা স্থানান্তরের আগেই সম্মতি দিয়েছিল যে তারা যে অর্থ পাবে সেখান থেকে ইউনিয়ন আইনি খরচের জন্য টাকা কেটে রাখবে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন কর্মচারীরা প্রথমবারের মত তাদের আইনজীবী নিয়োগ দেয়, কর্মচারীরা সবাই একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিল।স্মারক অনুসারে মামলাতে বিজয়ী হলে গ্রামীণ টেলিকমথেকে তারা যে পরিমান অর্থই আদায় করতে পারবে, তার ৫% অংশ আইনজীবীকে তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া হবে।এই স্মারকটি কর্মচারীরা নিজেরাই তৈরি করে, এবং তখনো ইউনিয়ন গঠিত হয়নি। স্মারকে উল্লেখ ছিল: “অত্র মামলার ফলাফল আমাদের পক্ষে আসলে আমরা আমাদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত টাকার ৫.০০% (পাঁচ শতাংশ) হারে প্রদান করতে বাধ্য থাকবো।” কর্মচারীদের ইউনিয়নটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে।
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখ সম্বলিত একটি সমঝোতা স্মারকের একাংশের ছবি। স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেছেন সেসময় কোম্পানিতে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। |
এছাড়াও, ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল, কোন অর্থ কেটে রাখার আগেই, প্রত্যেক কর্মচারী একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করে জানান যে, “আমার প্রাপ্য অর্থ আদায় করার জন্য আমার পক্ষে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সাথে আপোষ-মিমাংসার জন্য উক্ত ইউনিয়নকে আনুরোধপূর্বক সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব অর্পণ করেছি”। চিঠিতে আরো লেখা হয় যে “আমার প্রাপ্য অর্থ উক্ত ইউনিয়নের নিকট হস্তান্তর করা হলেও আমার কোন আপত্তি থাকবে না।”
এটা মনে রাখা দরকার যে এই অর্থ আলাদা করে রাখার প্রক্রিয়াটি ছিল ট্রেড ইউনিয়ন, তাদের আইনজীবী এবং কর্মচারীদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য অর্থ থেকে যত ইচ্ছা তত অর্থ তাদের ইউনিয়নকে দিতে পারে। এই বন্দোবস্ত বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকম এবং তার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কোনো ভূমিকাই নেই।
অর্থাৎ, কর্মচারীদের সম্মতি নিয়ে এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী ট্রেড ইউনিয়নের অনুরোধের ভিত্তিতে সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রেড ইউনিয়নের অ্যাকাউন্টে ২৪.৫৮ কোটি টাকা আইনসম্মতভাবে এবং সঠিক উপায়ে পাঠানো হয়েছিল।
১.৬৩ কোটি টাকা: আলোচ্য অর্থের (২৬.২২ কোটি টাকার) দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে ১.৬৩ কোটি টাকা. দুদকের অভিযোগ অনুসারে এই টাকা ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে বেআইনিভাবে স্থানান্তর করা হয়েছিল। দুদকের দাবি, এই অর্থ “লাভবান করার হীন উদ্দেশ্যে” এবং “মামলা থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য” পরিশোধ করা হয়েছিল।
এই অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদেরকে প্রথম হিসাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা হিসাবে যে প্রথমে ভুল করে ৪৩৭ কোটি টাকা নির্ধারণের বিষয়টিতে ফেরত যেতে হবে।
টাকার অংকের ভুল ঠিক হলেও ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা আগের হিসেবে পাওনা নেবার বিষয়ে স্থির থাকেন। অর্থাৎ তারা সংশোধিত যে অংক, বা ৪০৯.৫৯ কোটি টাকা, তার ৬% নিতে রাজি হয় নি। বরং তারা ৪৩৭ কোটি টাকার ৬% অর্থ পাওনা নেবার বিষয়ে অটল থাকে। এর ফলে ১.৬৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়।
বলা বাহুল্য, প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাড়তি খরচ করার কোনো অভিপ্রায় গ্রামীণ টেলিকমের ছিল না। কিন্তু কোম্পানি আদালতে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়ার মামলা চলমান থাকা এবং ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা অতিরিক্ত ১.৬৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে দেয়াই শ্রেয় মনে করে।। তাই গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদ এই অর্থ পরিশোধে সম্মত হয় যা পরে ২৬ জুনের পরিচালনা পর্ষদের সভার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়:
সুদের হারের হিসাব সংশোধন করার পর, WPPF-এর পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৯,৬৯,২২,৭৮৯ টাকায়। প্রত্যেক কর্মচারী গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নকে (সিবিএ) পরিশোধের জন্য ইতোমধ্যে একটি অঙ্গীকারনামা দাখিল করে তাদের পাওনা টাকার পরিমাণ থেকে ৬% হারে টাকা কেটে রাখার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে, এবং সেই অনুসারে ইউনিয়নকে সেই টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এই চুক্তি অনুসারে, দুই পক্ষ যেই অর্থ পরিশোধের ব্যপারে সম্মত হয়েছে তার পরিমাণ ৪৩৭,০১,১২,৬২১ টাকা। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) সমঝোতা চুক্তিতে যে অর্থ পরিশোধের জন্য সমঝোতা হয়েছিল তার ৬% টাকা দাবি করছে। এই অবস্থায়, ব্যারিস্টারের সাথে আলোচনা হয় […]। তিনি জানান যে তিনি এই অংশের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবেন না; এটা তার দেখার বিষয় না। যাই হোক, দুই পক্ষ সমঝোতা চুক্তিতে উল্লেখিত পরিমাণের বিষয়ে একমত হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) দাবি মোতাবেক অতিরিক্ত {(৪৩৭,০১,১২,৬২১ x ৬%) – (৪০৯,৬৯,২২,৭৮৯ x ৬%)}= ১,৬৩,৯১,৩৮৯ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
এই ১.৬৩ কোটি টাকা পরিশোধকে দুদক বেআইনি বলতে চাচ্ছে বলেই এফআইআরের ভাষায় মনে হয়। কিন্তু এই টাকা দেয়াকে বেআইনি বা আত্মসাত হিসেবে বিবেচনা করা যেত যদি চুক্তি অনুসারে কর্মচারীদের পাওনা যে অর্থ তা না তাদেরকে পরিশোধ না করে ট্রেড ইউনিয়নকে দেয়া হত।কিন্তু এক্ষেত্রে এমন ঘটেনি। কর্মচারীদের পাওনা ছিল ৩৬৪.৬২ কোটি টাকা। এই ১.৬৩ কোটি টাকা সেখান থেকে নেয়া হয়নি। ৩৬৪.৬২ কোটি টাকা কর্মচারীদের ১৫৬টি ব্যাংক হিসাবে যথাযথ ভাবে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ১.৬৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে বাকি থাকা ২৮ কোটি টাকা থেকে (প্রথমবার জমা হওয়া ভুল হিসাবের ৪৩৭ কোটি টাকা থেকে ৪০৯.৬৯ কোটি টাকা কেটে রাখলে যে অর্থ বাকি থাকে সেখান থেকে)। এই অর্থ গ্রামীণ টেলিকমের কাছেই ফেরত যাওয়ার কথা ছিল, যেহেতু এটা ছিল চূড়ান্ত সমঝোতার অর্থের পরিমাণের অতিরিক্ত অর্থ।
যদি এই অতিরিক্ত ১.৬৩ কোটি টাকা ট্রেড ইউনিয়ন না দাবি করতো, এই বিষয়টি নিয়ে হয়তো এত জল ঘোলা করার সুযোগই থাকতো না।তবে এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে যে এই টাকাটা শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থ থেকে যেহেতু দেয়া হয়নি এবং তাই এখানে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে আত্মসাতের প্রশ্নই আসে না। গ্রামীণ টেলিকম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং তারা তাদের ট্রেড ইউনিয়নকে যত ইচ্ছা তত টাকা দিতে পারে যদি না এই টাকা অন্য কারো প্রাপ্য হয়ে থাকে। এবং যেহেতু এই টাকাটা কর্মচারীদের প্রাপ্য অর্থ না, এখানে এই অর্থ পরিশোধে তাদের সম্মতি আদায়ের কোন প্রশ্নও নেই।
পরিশেষে বলা যায়, ২৪.৫৮ কোটি টাকা নিয়মসিদ্ধভাবেই (শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থ থেকে) কেটে রাখা হয়েছিল এবং ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছিল যেন এই টাকা দিয়ে তারা তাদের বিভিন্ন ব্যয় পরিশোধ করতে পারে। অনুরূপভাবে ১.৬৩ কোটি টাকার যে অংক, তাও শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থ থেকে আসেনি। কাজেই এখানে ফৌজদারি অপরাধ ঘটেছে এর সমর্থনে কোন প্রমাণ দেখা যায় না।
ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন
এফআইআরে দুদক ২৬.২২ কোটি টাকার লেনদেনের বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ করেছে (২৬.২২ কোটি টাকা হলো পূর্বে উল্লেখিত শ্রমিকদের প্রাপ্য অর্থ থেকে কেটে রাখা ৬% এবং অতিরিক্ত ১.৬৩ কোটি টাকার সমন্বয়)।
এই বিষয়ে আলোচনার আগে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার যে এই অর্থ লেনদেনের বিষয়ের সাথে গ্রামীণ টেলিকমের কোন সম্পর্ক নেই খুবই যৌক্তিক এবং সহজবোধ্য কারণে। প্রতিষ্ঠানটি- এবং এর পরিচালকেরা- তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন কর্মচারীদের সঠিক পরিমাণে অর্থ পরিশোধ করার মাধ্যমে; মোট ৩৬৪.৬২ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে ইউনিয়নের সদস্যদের, যেখান থেকে কর্মচারীদের সম্মতি সহকারে, ৫% অর্থ কেটে রাখা হয়েছে কর হিসাবে (২০ কোটি টাকা) এবং ৬% অর্থ কেটে রাখা রয়েছে ইউনিয়নের আইনি ও প্রশাসনিক কাজের ফি হিসেবে (২৪.৫৮ কোটি টাকা)। এই অর্থ ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে যথাযথভাবে পরিশোধের পর প্রতিষ্ঠানটি/প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের এই অর্থের উপর কোন দায়িত্ব কিংবা নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
তবুও, যেহেতু দুদক গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালকদের এই অর্থ আত্মসাতের সাথে সম্পৃক্ত করতে চাইছে, তাই এই অর্থ নিয়ে আলোচনার গুরুত্ব আছে।
আইনি ফি: প্রথমত এখানে আইনজীবীদের ফি এবং আইনি অন্য খরচের বিষয় আছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৭ সালে কীভাবে ইউনিয়নের কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে একটি স্মারকে স্বাক্ষর করে সম্মতি দিয়েছিলেন যে তারা যেই পরিমাণ অর্থই আদায় করুক তার ৫% দেয়া হবে ইউনিয়নের আইনজীবীদের। “শ্রম আদালতে কোম্পানির নীট লভ্যংশে অংশগ্রহণ এবং চাকুরীর শর্তাবলি বিষয়ে মামলা পরিচালনা বিষয়ে যৌথ সমঝোতা স্মারক” নামে এই স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ৭৯জন কর্মচারী যারা তখন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ছিলেন।
সেই স্মারকে বলা ছিল:
৪. দায়েরকৃত মামলা পরিচালনার ব্যয় বাবদ প্রত্যেকের নিকট হতে সমানহারে চাঁদা সংগ্রহপূর্বক একটি তহবিল গঠন করা হবে যা থেকে সময়ে সময়ে মামলার প্রকৃত ব্যয়, ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত ব্যয় এবং অন্যান্য যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হবে;
৫. অত্র মামলার ফলাফল আমাদের পক্ষে আসলে আমরা আমাদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত টাকার ৫.০০% (পাঁচ শতাংশ হারে) প্রদান করতে বাধ্য থাকবো;
পাঁচ বছর পর, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে, নিয়োজিত আইনজীবীরা তাদের ক্লায়েন্টদের দাবি দাওয়া আদায়ে সফল হয়। তারা যে সমঝোতায় পৌঁছায় তাতে গ্রামীণ টেলিকম ৪০৯.৬৯ কোটি টাকা ১৬৪ জন কর্মচারীকে পরিশোধ করতে রাজি হয়। ইউনিয়নের জন্য এটা ছিল বড় ধরনের সাফল্য। ২২ জন কর্মচারী চার কোটি টাকারও বেশি অর্থ পান, ৪৪ জন কর্মচারী পান ৩ কোটি টাকারও বেশি অর্থ। এই পরিমান অর্থ মানুষের জীবন বদলে দেবার জন্য যথেষ্ঠ।
সমঝোতা সম্পাদন হওয়ার পর আইনজীবীদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধের বিষয়টি সামনে আসে এবং তারা একটি চালানের মাধ্যম ১৬ কোটি টাকার বিল ইউনিয়নকে প্রদান করে। এই টাকার পরিমান নিঃসন্দেহে যথেষ্ঠ বড়। কিন্তু তবুও শতকরা হিসেবে এই অর্থ ৪০৯.৬৯ কোটি টাকার ৪% থেকেও কম ছিল, যেখানে ২০১৭ সালে আইনজীবীদের সাথে যে সমঝোতা হয় সে অনুসারে তারা ৫% দাবি করার অধিকার রাখে। আইনজীবীরা যদি নির্ধারিত ৫% হারে অর্থ নিতেন , তবে এর পরিমান ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত।
এখানে আরো কিছু বিষয় বিবেচনা করা আবশ্যক। আইনজীবীরা যে শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের সাথে মীমাংসায় পৌঁছাবার জন্যই এই অর্থ গ্রহণ করেছেন তা না। প্রথমত, তারা ১৬৪ জন ক্লায়েন্টের জন্য আলাদাভাবে গ্রামীণ টেলিকমের সাথে সমঝোতা সম্পাদনের কাজ করেছেন। এছাড়াও, এই সমঝোতায় পৌঁছাবার জন্য ২০১৭ সাল থেকে ৫ বছর ব্যাপী যত আইনি কর্মকান্ড পরিচালনার প্রয়োজন ছিল তা তারা করেছেন । তাদের এসব কাজের ভেতর অন্তর্ভুক্ত ছিল চারটি ভিন্ন ভিন্ন মামলায় কর্মচারীদের পক্ষে শ্রম আদালত এবং উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই এবং কোম্পানি আদালতে একটি জটিল মামলা পরিচালনা করা।
বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের “পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধিমালা” অনুসারে, ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে, একজন আইনজীবী শুধু “মামলার বিষয়বস্তুর নতুনত্ব, অভিনবত্ব ও প্রশ্নের জটিলতা নিরসনে কিরূপ দক্ষতা, শ্রম এবং সময় বিনিয়োগ করিতে হইবে” বিবেচনায় নিলেই হবে না, “মামলার বিরোধপূর্ণ বিষয়ের মূল্যমান ও মামলার ফলাফলে মক্কেল কী পরিমাণ সুফল লাভ করিবেন” তাও বিবেচনায় নিতে হবে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের “পেশাগত আচরণ ও শিষ্ঠাচার বিধিমালা” পুস্তিকার একাংশের ছবি। |
এফআইআরে দুদক উল্লেখ করেছে “বর্ণিত প্রেক্ষাপটে” দেখা যায় , আইনি কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কেবল ১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু এমন ধারণা করার পেছনে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এছাড়াও, আইনজীবীদের অর্থ পরিশোধের জন্য নির্দেশনা দিয়ে ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন। চিঠিতে স্পষ্টভাবে এই অর্থ পরিশোধের কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে, “আইনজীবীর ফি এবং আইনি সহায়তার জন্য”। কাজেই দুদকের কাছে দালিলিক প্রমান রয়েছে যে আইনজীবীদের পারিশ্রমিক হিসেবে “প্রকৃতপক্ষে” “মাত্র ১.০০ কোটি টাকা” হস্তান্তর হয়েছে এমন দাবী সঠিক নয়।
গ্রামীণ টেলিকম থেকে ব্যাংক-কে পাঠানো চিঠি। চিঠিতে আইনজীবীদের পারিশ্রমিক প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনজীবীদের মোট পারিশ্রমিকের অর্ধেক অংশ এখানে প্রদান করা হয়েছে। |
পারিশ্রমিকের পরিমান বেশি মনে হলেও এখানে নীতিবিরুদ্ধ কিছু ঘটেনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ঘটনা হলো আইনজীবীর পারিশ্রমিক কীভাবে ফৌজদারি অপরাধের বিষয়বস্তু হতে পারে তা বোধগম্য নয়। বিশেষত আইনজীবীদের যারা নিয়োজিত করেছেন তারা বা আইনজীবীদের কোনো অভিযোগ না থাকে, যেক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের পরিমাণ নিয়ে অনুসন্ধানের কোন কারণ থাকতে পারে এমন দাবি অভিনব। এই মামলা যদি কোন কারণে আদালতের নজির হতো, তবে বাংলাদেশে আইনজীবীদের কাজের জন্য বড় অংকের পারিশ্রমিক নেয়া অবৈধ হয়ে পড়তো।
ইউনিয়নের প্রশাসনিক ব্যয়: এরপর প্রশ্ন আসে বাকি২৬.২২ কোটি টাকার ১৬ কোটি যদি আইনজীবীদের পারিশ্রমিক হয়ে থাকে, তবে বাকি ১০.২২ কোটি টাকার কি হলো। এই অর্থ নেয়া হয়েছিল এই মামলা পরিচালনার জন্য ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যত ধরণের খরচ হয়েছিল তা মেটাতে। এফআইআরের মতে, তিনজন ইউনিয়ন নেতা এই অর্থের প্রায় সব বা অধিকাংশ অর্থ নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছিলেন।
, ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাব থেকে নিজেদের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের কথা ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা অশিকার করেননি। ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যায় যে এই অর্থ তারা নিজেদের জন্য নয়, বরং গ্রামীণ টেলিকম থেকে পদত্যাগ করা সব কর্মচারীকে নিয়ে একটি নতুন ব্যবসা খোলার জন্য আলাদা করে রেখেছিলেন। সূত্রদের মতে, যেহেতু গ্রামীণ টেলিকমের সাথে সমঝোতার অংশ হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নটিক বিলুপ্ত করে দেবার কথা, এবং এই ব্যাংক হিসাবটিও বন্ধ করে দিতে তারা বাধ্য, তাই তারা বাকি অর্থ নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। অর্থাৎ, এই ব্যাংক হিসাবটিকে যেহেতু বন্ধ করে দিতে হতো, তাদেরকে এই অর্থ অন্য কোন হিসাবে সরাতে হত। কিন্তু যেহেতু তাদের নতুন প্রস্তাবিত ব্যবসায়ীক উদ্যোগের কোন ব্যাংক হিসাব ছিল না, তারা তাদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করতে বাধ্য হন।
এখানে সত্য যেটাই হোক, যদি ধরে নেয়া হয় যে ইউনিয়নের নেতারা আসলেই অর্থ আত্মসাত করেছিলেন, এই বিষয়টি নিয়ে মামলা করার দায় দুদকের না, বরং বাংলাদেশের শ্রম অধিদপ্তরের, কারণ বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুসারে এই দপ্তরটির দায়িত্ব এই সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার। আইনে আছে:
“শ্রমিকগণের অথবা মালিকগণের কোন ট্রেড ইউনিয়নের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী উক্ত ট্রেড ইউনিয়নের তহবিলের অর্থ আত্মসাত্ করিলে, তছরূপ করিলে অথবা অসত্ উদ্দেশ্যে নিজের কাজে ব্যয় করিলে, তিনি এক বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং অধিকন্তু তিনি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।”
এবং ধারা ২৯৮(৩) মোতাবেক এই অর্থ আত্মসাতের পর ফেরত আনার ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যদি ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা এই অর্থ আত্মসাত করেও থাকেন, তার জন্য গ্রামীণ টেলিকম কিংবা ট্রেড ইউনিয়নের আইনজীবীরা কোন ক্রমেই দায়ী হতে পারেন না।
দুদকের দাবির সাথে বাস্তবতার মিল নেই
দুদকের অভিযোগের মূল ভিত্তি যে ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত তা হচ্ছে গ্রামীণ টেলিকম এবং এর পরিচালকেরা পারস্পারিক যোগসাজসে কর্মচারীদের প্রাপ্য অর্থ আত্মসাত করেছেন। কিন্তু উপরে উল্লেখিত বিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, এখানে কোন অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি কারণ:
ক) কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য পুরো অর্থ বুঝে পেয়েছেন;
খ) গ্রামীণ টেলিকম ট্রেড ইউনিয়নকে যে অর্থ দিয়েছে তার মধ্যে কর্মচারীদের প্রাপ্য এমন কোন অর্থ ছিল না যা গ্রামীণ টেলিকমের সরাসরি কর্মচারীদের দেয়া উচিৎ ছিল;
গ) কর্মচারীরা লিখিতভাবে তাদের প্রাপ্য অর্থ থেকে আইনি ও প্রশাসনিক খরচ কেটে রাখার বিষয়ে অঙ্গীকারনামা জমা দিয়েছিল।
এসব তথ্যের আলোকে বলা যায় গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালকেরা “প্রতারণা,” “জালিয়াতি,” “অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ” কিংবা “অর্থ পাচার” ইত্যাদি অপরাধ করেছেন এমন অভিযোগ উত্থাপনের কোনো সুযোগই নেই। একই কথা ট্রেড ইউনিয়নের আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
যে বিষয়টি এখানে একদমই বোধগম্য নয় তা হলো, দুদক পরিচালকদের বিরুদ্ধে যে ফৌজধারী অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ করা হয়েছে তাতে তাদের লাভ কী? আমরা সমঝোতা চুক্তিটি থেকে দেখতে পাই, কর্মচারীরা, যারা বাংলাদেশে কোটিপতিতে পরিণত হয়েছিলেন, এই চুক্তি থেকে খুবই লাভবান হয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি তাদের দাবি মেনে নিয়ে, আইন মেনে, বৈধভাবে এই সমঝোতা করেছিল। কর্মচারীরা যা যা চেয়েছিলেন সবই পেয়েছিলেন। এই ধরণের একটি ফৌজদারী অপরাধে প্রতিষ্ঠানটি বা তার পরিচালকেরা কেন জড়াবেন যেখানে তাদের কোন ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক লাভ নেই?
যদি ট্রেড ইউনিয়ন দশ কোটি টাকা নয়-ছয় করেও থাকে- এই প্রতিবেদনে তারা এটি করেছে কি করেনি সেই বিষয়ে কোন উপসংহারে আসার চেষ্টা করা হয় নি- সেটি কোনভাবেই গ্রামীণ টেলিকম বা তার পরিচালকদের উপর বর্তায় না। এছাড়াও, যদি এমন কোন প্রমাণ থেকেও থাকে যে তারা এই অর্থ আত্মসাত করেছেন, সেটি দুদকের দেখার বিষয় নয় বরং শ্রম আইনের ২৯৮(৩) ধারা অনুসারে এই বিষয়টি দেখার দায় বাংলাদেশের শ্রম অধিদপ্তরের।
কোন গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে আইনের শাসন রয়েছে, সেখানে একটি বিশেষায়িত দুর্নীতি দমন সংস্থার উপস্থিতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশটির অবস্থানকে শক্তিশালী করে। তবে এই মামলা এমন একটি উদাহরণ তৈরি করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে আইন মেনে চলা বরং , আইন না মানার চেয়েও বিপদজনক হয়ে উঠেতে পারে।